ব্যাংক একীভূতকরণের নীতিমালা জারি


বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমবারের মতো ব্যাংক একীভূতকরণের জন্য নীতিমালা জারি করেছে। সেখানে একীভূতকরণের ফলে কী হবে এবং একীভূত হতে কী করণীয় তা স্পষ্ট করা হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যক্তির আমানত ফেরত অগ্রাধিকার ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানত ফেরতে মেয়াদি কর্মপরিকল্পনার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংক বহুল আলোচিত মার্জার বা একীভূতকরণ সম্পর্কিত এ নীতিমালা জারি করে।

নীতিমালায় বলা হয়, সবল ব্যাংকের সঙ্গে এক বা একাধিক দুর্বল ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও লিজিং কোম্পানি একীভূতকরণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিশ্রেণির আমানতকারীর অর্থ পরিশোধ বা ফেরত প্রদান কিংবা তাদের হিসাব ও ব্যাংকিং লেনদেন সচল করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ের কর্মপরিকল্পনা করে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই কর্মপরিকল্পনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তনসহ বা পরিবর্তন ব্যতীত অনুমোদন প্রদান করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক পূর্বে জারি করা প্রম্পট কারেকটিভ অ্যাকশন বা পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক প্রতিপালনে ব্যর্থ ব্যাংকগুলোকে ডিরেক্টিভ অব বাংলাদেশ ব্যাংক বা ডিওবিবি দেওয়া হবে। এ ডিওবিবিতে একীভূতকরণের দিকনির্দেশনা থাকবে।

একীভূত হওয়া ব্যাংকের মধ্যে একীভূতকরণের পর হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংককে ১০ (দশ) ধরনের নীতি সহায়তা দেওয়ার কথা নীতিমালায় বলা হয়েছে। মূলত, দুর্বল ব্যাংক গ্রহণ করার ফলে গ্রহীতা ব্যাংকটির মূলধন, তারল্য, খেলাপি ঋণ ইত্যাদি আর্থিক সূচকসমূহ প্রভাবিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে গ্রহীতা ব্যাংকের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখা এবং জনস্বার্থে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে প্রয়োজন মতো বাংলাদেশ ব্যাংক নিম্নলিখিত সহায়তা দেবে। ১) ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ, ২) ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও, ৩) স্ট্যাটুটরি লিকুইডিটি রেশিও, ৪) লিকুইডিটি কভারেজ রেশিও, ৫) নেট স্ট্যাবল ফান্ডিং রেশিও সংরক্ষণে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট অংশ অব্যাহতি প্রদান করা, ৬) হস্তান্তরকারী কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসানকে ‘গুডউইল’ এ রূপান্তরপূর্বক তা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংকের আয় থেকে সমন্বয় বা পরিশোধের সুযোগ দেওয়া, ৭) বিদ্যমান সুবিধাদির আওতায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তারল্য সুবিধা প্রদান, ৮) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি বন্ড কেনার মাধ্যমে নগদ সহায়তা, ৯) মূলধন বৃদ্ধির জন্য শেয়ার ইস্যু, পারপেচুয়াল বন্ড এবং সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুকরণে সহায়তা প্রদান, ১০) ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার-১৯৭২ এর বিধান সাপেক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবেচনা অনুযায়ী অন্যান্য নীতি সহায়তা প্রদান।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক কোম্পানি কর্তৃক হস্তান্তরকারী ব্যাংক কোম্পানি বা ফাইন্যান্স কোম্পানির বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন বছরপূর্তির আগে ছাঁটাই করা যাবে না। তবে তিন বছর পর পুনর্গঠিত বা হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক কোম্পানি ওইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। একত্রীকরণের পর হস্তান্তরকারী ব্যাংক/ফাইন্যান্স কোম্পানির বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো পরিচালক হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হতে পারবেন না। তবে পাঁচ বছর পর, হস্তান্তরকারী ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা তাদের শেয়ারধারণের আনুপাতিক হারে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও উপযুক্ততা থাকা সাপেক্ষে, পর্ষদে পরিচালক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।

নীতিমালায় বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ এর ধারা ৪৯(১) (গ), ৭৭ (১৬) এবং কোম্পানি আইন-১৯৯৪ এর ধারা ২২৮ ও ২২৯ এর বিধান অনুসরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে এবং মধ্যস্থতায় কোনো ব্যাংক কোম্পানি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অন্য কোনো ব্যাংক কোম্পানির সঙ্গে একীভূত হতে পারবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ এর ৭৭ক ধারায় ব্যাংক কোম্পানির পুনরুদ্ধার বিষয়ে দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পিসিএ সার্কুলার দিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্য পরিমাপ করতে নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক মূলধন ও তারল্য ঘাটতি, উচ্চ মাত্রার খেলাপি ঋণ, সুশাসনের ঘাটতি এবং সর্বোপরি আমানতকারীদের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপের কারণে একীভূতকরণ করতে পারবে। এটি স্বেচ্ছায় না হলে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্পিত ক্ষমতাবলে একীভূতকরণে উদ্যোগ নেবে।

Author


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *